দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে গণআদালতের নেতৃত্ব
কে দিবে?
দশম সংসদ নির্বাচন খুব বেশি দেরি নেই।
পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলগুলোও সরকারের সাথে সাথে কাটিয়ে দিল তাদের সময়। সমালোচনা,
টক শো আর কত কি! অসভ্যদের, দুর্নীতিবাজদের টিভি চ্যানেলে গিয়ে তাদের থেকে পয়সা
নিয়ে জাতিকে সভ্য হবার তালিম দেয়ার অসভ্যতা হয়েছে প্রচুর। দুর্নীতির ফাঁকে ফাঁকে সুন্দরী
প্রতিযোগিতার নামে যে দুর্নীতির সংস্কৃতি জাতির রক্তের মধ্যে মিশিয়ে দেয়ার
প্রবণতাও ভয়ংকর জোরালো হয়েছে। যে যেখানে পারছে সুযোগ নিচ্ছে। সুযোগ নিতে কেউ ভুল
করছে না।
কিন্তু পরিত্রাণের পথ নিয়ে কাজ করার তাগিদ
কতটা এসেছে? যারা টক শো তো দেশ উদ্ধার করেছে, তারা কাদের টিভিতে গিয়ে কথা বলেছে?
তাদের নিজেদের সম্পদের হিসাব আছে নাকি সেইসব টিভি মালিকদের সম্পদের হিসাব আছে?
দু’একটা বাজার ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এটা যেন শিক্ষা অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করার মতই নিস্ফল এক সমাধান। প্রশ্ন
হলো, তার মানে বাকি সব বাজারে ফরমালিন হালাল করা হয়েছে?যাদের শ্রমে দেশ চলছে, সে
শ্রমিকদের মালিকরা শ্রমিকদের হত্যা করছে, সরকারী সম্পদ দখল করে পুরো দেশটাকে
বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারাই দেশের মালিক, তারা যা করবে তাই আইন।
এরকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যায়। তবে এ অবস্থা
থেকে পরিত্রাণ কি খুব কঠিন? বাংলাদেশে তো একটি অসম্ভব ঘটনা ঘটে গেছে এবং তার
ধারাবাহিকতা চলবে। সেটি হলো শীর্ষ অসীম ক্ষমতাধর যুদ্ধাপরাধীদের আটক এবং তাদের
বিচারকার্য। সেই কবে, মনে পড়ে ১৯৯২ সালের কথা, যখন প্রয়াত শহীদ জননী জাহানারা ইমাম
লক্ষ লক্ষ মানুষকে উজ্জিবিত করেছেন। তখন তো হাজার হাজার মানুষ বলেছে, “এটি কখনই
সম্ভব নয়”, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশে হবে না। দীর্ঘ দু দশকের সংগ্রামের ফল
হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারকার্য।
গত ৪০ বছরে সরবেই লক্ষ লক্ষ দুর্নীতিবাজ দানব
তৈরি হয়ে গেছে বাংলাদেশে। দানবরা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ,ব্যবসা, পত্রিকা, গার্মেন্টস
সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানে ঢুকে পড়েছে। ১৪ কোটি মানুষ দুকোটি দুর্নীতিবাজের কাছে বন্দি।
দুকোটি দুর্নীতিবাজ পাকিস্তানী হানাদারদের থেকেও নিষ্ঠুরভাবে দেশটাকে শোষণ করছে,
প্রতিদিনই লুণ্ঠন করছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য, “গণআদালতে
দুর্নীতিবাজদের বিচার” –এর প্রচারাভিযান জোরালো ভাবে চালানো প্রয়োজন। শহীদ জননী
জাহানারা ইমামের মত খুব বেশি শ্রদ্ধাভাজন মানুষ বাংলাদেশে নেই। দলমত নির্বিশেষে
সবাই ভালবাসে এমন একজন মানুষ খুঁজলে সম্ভবত জাফর ইকবাল স্যারকেই পাওয়া যাবে। দুর্নীতিবাজরা
যাতে আগামী নির্বাচনে কোনমতেই নির্বাচিত না হতে পারে, দেশের প্রতিটি কার্যালয়কে
দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করা, দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করা, দেশের শীর্ষ পাঁচ হাজার
সরকারী কর্মকর্তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করা সহ অনেকগুলো কাজ করার জন্য আরেকটি
শক্তিশালী প্রচারাভিযান চালাতে হবে।
জাফর ইকবাল স্যারকেই হয়তো সে দায়িত্বটি কাঁধে
নিতে হবে।