Monday, October 14, 2019

আমরা আসলে কী চাই?

আমরা আসলে কী চাই?

এক মেডিকেল কোচিং সেন্টারের মালিক ডাঃকে ধরা হয়েছে। গত ১৮ বছরে ৪০০০ ছাত্রকে সে পাবলিক মেডিকেলে অবৈধভাবে চান্স পেতে অর্থের বিনিময়ে কাজ করেছে।
ঘটনাটা কী ভয়াবহ! মেডিকেলে চান্স পাওয়া এই গুরুর বিষয়টা কোথাও কোন আলাপ নেই। দেশ নিয়ে বড় বড় কথা বলা সবাই চুপ। লম্বা লম্বা বোলচাল দেয়া, সোশ্যাল মিডিয়া গরম করা লোকজন যাদের মধ্যে আমাদের অনেক প্রিয় ডাক্তাররাও আছেন, সবাই যেন মুখে কী দিয়ে অন্য আলাপে ব্যস্ত!
এক একজনকে চান্স পাওয়াতে গড়ে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে। ৪০০০x৪০ লাখ টাকা = কত টাকা?
এই যে ৪০০০ ভেজাল ঢুকে গেলো, যাদের পেছনে রাষ্ট্রের আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এর দায় কে নিবে?
এই যে ৪০০০ ভালো বা যোগ্য ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করেছে, তার দায় কে নিবো? যে ভালো ৪০০০ ছেলেমেয়ের ডাক্তার হওয়ার কথা ছিলো, তারা না হয়ে টাকা দিয়ে রেজাল্ট পালটে দিলো সেইসব অশুভ অমানুষগুলো।
এরাই তো ঔষধ কোম্পানির দালাল হবে। ঔষধ কোম্পানি ৪০০০ ফ্রি দালাল পেয়ে যাবে। যারা ঔষধ কোম্পানির হাতে হাজার কোটি টাকা তুলে দিবে আর মানুষকে নিঃস্ব করে লাখ কোটি টাকা চুষে নিবে ক্লিনিক মালিক, দালাল সবাই মিলে।
কী ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে এই ডাক্তার, এবং ডাক্তারদের একটি বড় জোট এই অপকর্মে জড়িত।
অথচ কোথাও শব্দ নেই। র‍্যাব, গোয়েন্দাবিভাগ তদন্ত করছে। কিন্তু এত বছর চললো কীভাবে এই ভয়ংকর অপকর্ম? আমরা কেউ কথা বলছি না কেন?
এই যে আমাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড - এর শেষ কোথায়? এই যে আমাদের ভণ্ডামি এর শেষ কোথায়?
আমাদের ভণ্ডামির জন্যেই বড় বড় দানবরা তৈরি হচ্ছে। আমরা কেউ পিছিয়ে নেই।
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ - সবাই লুটপাট করে খাচ্ছে এক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত প্রিয় বাংলাদেশকে।

Saturday, August 3, 2019

নাগরিক সংকট

নাগরিক সংকট!
সিএনজিতে যাচ্ছি। গুলশান-১ চেকপোস্টে থামালো। পুলিশ আমার ব্যাগ ৩ বার চেক করলো। আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি। মেডিটেশন করা মানুষ। সহজে রাগি না।
সিনিয়ির যে ছিলেন, তাকে ডাকলাম। বললাম, ভাই, উনি কি সুস্থ আছেন? এক ব্যাগ ৩ বার চেক করছেন! যাই হোক, উনি পরিচয় জানতে চাইলেন। পরিচয় দেয়ার পরে কয়েকবার সরি বললেন।
বললেন, "আপনি কোন ব্যাচ? আমার ছোটোভাই ৯x ব্যাচ।" বুঝলাম আমার ৫ ব্যাচ ছোটো।
"আমার ভাই রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে আছে। ৩ কোটি টাকা দিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বাড়ি করতেছে!"
আমি বললাম, আপনার ভাইয়ের বেতন কত?
গর্বে ভরা চেহারাটা মুহূর্তে ছাই হয়ে গেলো।
আমরা নাগরিকরা 'সবাই খারাপ, আমি ভালো' এক সিন্ড্রোমে আছি।
দোস্তো বলিস না, এই শালা ট্রাফিক পুলিশ, শালারা দুই টাকারও ঘুষ খায়!
দোস্তো, তোদের ফ্লাটে কত খরচ পড়েছে? এই সব মিলে ৯৭ লাখ।
তোর বাবা তো ট্যাক্সে আছে, বেতন কত? চেহারা আবারও ছাই।
ওদিকে লায়লা তার বয়ফ্রেন্ডকে বলছে, কাবিন কিন্তু ৩০ লাখ টাকা হতে হবে। (বয়ফ্রেন্ড ২৮ হাজার টাকার বেতনের চাকুরি করে!+) না হলে আমার প্রেস্টিজ পাংকচার! ফেবুতে পোস্ট দিয়েছে, "যে ছেলে যৌতুক চায়, তাদের না বলুন!"
এদিকে মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে কলেজের টিচার, আরেকজন পিডাব্লিউতে চাকুরি করে। মেয়ের বাবা পরেরজনে মত দেয়ায় মেয়ে বলছে, " বাবা তোমার পছন্দ সেরা"!
এক আত্মীয়ের বাসায় গেলাম। সারা জীবন সততার বুলি আউড়িয়েছেন। মেয়ের জামাই চাকুরি করেন সিটি কর্পোরেশনে। খুব গর্ব করে বলছেন, তার মেয়ে ঘরের ফার্নিচার ৪/৫ বছর পরেই পালটায়। মেয়ে খুব সৌখিন। ৮০ লাখ টাকায় ফ্লাট কিনে আরও ৫০ লাখ টাকা খরচ করছে ইন্টেরিয়র কাজে!
জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান, জামাইয়ের বেতন কতো?
মুখটা আবার সেই পুলিশ অফিসারের মতো ছাই হয়ে গেলো।
আমরা এত নষ্ট হয়েছি, এত নষ্ট হয়েছি যে, আমাদের কোন লজ্জা নেই। ঘুষ আমার অধিকার, কিন্তু কন্ডাকটর ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা চাইলে, "এগুলা মানুষ না। এই টাকা খাইয়া এরা কিছুই করতে পারে না। মানুষের টাকা মাইরা কিছুই করতে পারে না।" অথচ একটু আগেই মোবাইলে আলাপ করছিলো, একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরির জন্য ৯ লাখ আর ১০ লাখের ঘুষের আলাপ!!
কন্ডাকটর গলা কাটছে। গলা কাটছে শিক্ষিত দুর্বৃত্তরাও। শিক্ষিতদের গলাকাটা বড় নির্মম, দেশটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়।
কন্ডাকটররা একটা নিদারুণ সত্যি কথা বলে,
"আফনেরা যে কলমের খোঁচায় কুটি কুটি টাকা মাইরা খান, হেই হিসাব তো আমরা নেই না!"
কথা সত্যি এবং নিদারুণ সত্যি।
আজকে কিছু অসভ্য শ্রমিকদের দেখলাম অ্যাম্বুলেন্সেও কালি দিচ্ছে, আটকাচ্ছে।
সেই অ্যাম্বুলেন্স দেখে মনে পড়ে গেলো এর চেয়ে ভয়াবহ অসভ্য গোষ্ঠীর কথা। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির দালালদের কথা, যারা অতি উচ্চ শিক্ষিত এবং যাদের পেছনে রাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষধ, আইসিইউতে রেখে গলা কাটার সেই সব অমানুষদের কথা।
মানুষ হয়তো আছে। সংখ্যাটা কম।
শেষ করি, দুটো উদাহরণ দিয়ে। দুটো চকচকে চেহারার কথা!
শরীয়তপুর নামে একটি জেলা আছে। যেখানকার লাখ দুই ছেলে ইটালি থাকে। সেই এলাকার কোন মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব যদি ইটালির ছেলের হয়, খুশিতে সবার চেহারা চকচক করে (ছেলে বুড়া, ধুরা, বিয়াতো, দুই পোলার বাপ হইলেও সমস্যা নাই)। তবে এই মানুষগুলো খুব সাধারণ।
আর একটা চকচকে চেহারা আপনারা দেখবেন! যারা অসাধারণ!! 
মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তা কোথায় হলো, ছেলে কী করে?
যদি ঘুষের ডিপার্টমেন্টের হয়, 
দেখবেন মেয়ের বাবা মা, ভাই বোন আর মেয়ের চেহারা খুশিতে কেমন চকচক করে!!
অথচ এই যে অরাজকতা, এই যে ভেজাল জিনিস, এই যে উচ্চমূল্য, এই যে গলাকাটা সেবা, এই যে পেনশনের টাকা তুলতে ফাইলের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাওয়া, এই যে পরীক্ষায় ভালো করলেও চাকুরি না হওয়া, এই সবের মূলে তো ওই যে যেখান থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলে জিহবা চকচক করে, চেহারায় (নোংরা) খুশির ঢেউ উঠে, সেই দুর্নীতিবাজ শুওরদের কারণে।
বিখ্যাত এক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, "শুওরের বাচ্চাদের অর্থনীতি"! এই শুওরের বাচ্চারা কারা?
এই লেখা পড়ে পরে যাদের চেহারায় চপেটাঘাত পড়বে, ছাই হয়ে যাবে, তারা।

২৮ অক্টোবর ২০১৮ তে লেখা  আমার এই লেখাটি লক্ষ লক্ষ মানুষ পোস্ট করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

Tuesday, July 16, 2019

Sunday, April 23, 2017

গল্পগুলো বাংলাদেশের -

ছোটোবেলা থেকে সাফল্যের বেশির ভাগ গল্পগুলোর মানুষগুলো ছিলো অন্যদেশের। দেশের মধ্যে শেরে বাংলা আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গল্প পড়েছি। তবে সেগুলো রাজনীতি, সাহিত্য বা অন্য অবৈষয়িক বিষয়ের।
কয়েকদিন আগে বুয়েটের এক ছোটো ভাই আমাকে বলেছিলো, "খাজা ভাই অন্যদের কথা আর কতদিন বলবেন, আপনার গল্প শুনতে চাই, এমন কিছু করেন, অন্যেরা আপনার গল্প শুনবে!"
গল্প বড় বা ছোটো কোনটি? আচ্ছা, যে সৎ মাস্টারের ছেলেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে ১ পয়সা ঘুষ না দিয়ে চাকুরি পেলো তারটা? অথবা আমার যে বন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বড় কর্মকর্তা, জীবনে সে নামাজ কখনো কাযা করেছে কিনা জানি না, যাকে দেখলে মনে হয়, ও তো দুনিয়াতেই বেহশত কিনে নিয়েছে, এমন অসাধারণ মানুষ, তার গল্পটা?
থাক, আবারো চাকুরি নিয়ে বলছি! তরুণ ব্যবসায়ীদের কথা বলছি না কেন! ওই যে কিছু ছেলে টেলিকমের চাকুরি যাওয়ার পরে মোবাইল সেটের ব্যবসা শুরু করলো! ১ কোটি মোবাইলও তারা বিক্রি করে ফেলেছে। তাদের গল্পটা কিন্তু দারুণ!
ওই যে ২/৩ জন ২৫/২৬ বছরের ছেলে দেশে একটি আইটি কোম্পানি দিয়ে বছরে ১০০ কোটি টাকা আনছে বিদেশ থেকে! গল্পটা কি ছোটো? ভালো চাকুরি করছে প্রকৌশলী ছোটো ভাই, আবার ভ্রমণের নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপকে। ছুটি দুইদিন। এই দুইদিনই কাজে লাগাচ্ছে! বলেছে, খাজা ভাই, "এটি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা, করে দেখাতে চাই"। জানি ও পারবেই। গল্পটা ছোটা না বড়?
আমাদের বাসার সামনে একটা মুড়ির দোকান আছে, গুলশান লেকের সাথে। ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার প্যাকেজ! প্রতিদিন মুড়ি খেতে লাইন দেয় মানুষ! মাসে কম করে হলেও ৫ লাখ টাকা আয় হয় (মিনিমাম)। ওই লেকের পাড়ে ৫০-৬০ট শুধু ফুচকার দোকান গড়ে উঠেছে। প্রতিটার আয় মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা। গল্পটা কি ছোটো?
অথবা গত দুই বছরে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে যেতে যে রাস্তা আছে, কতগুলো নতুন খাওয়ার দোকান হয়েছে? ১০০ এর বেশি! অন্তত ওই রাস্তায় খাবারের দোকানের পিছনে সব মিলে ৫০ কোটি টাকার বেশি ইনভেস্ট করেছে! সব দোকানেই ভিড়!
ঢাকায় বসে কনটেন্ট লিখে কত তরুণ ছেলেমেয়ে ৬ ডিজিটের উপর আয় করছে , খবর নেই! আছে অনেক। গল্পটা ছোটো না বড়!
দেশে বৈশাখেও এখন বিক্রিবাট্টা ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দেশের দুই ঈদ এখন অর্থনীতকে পালটে দিচ্ছে। দুই ঈদে এবার হয়তো দুই লাখ কোটি টাকার বিক্রিবাট্টা হবে। বিশাল বিশাল বাজেট তৈরি হচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে, সে নিয়েতো সব সময় বলি। কিন্তু অর্থনীতি সব কিছুর পরেও বিশাল হচ্ছে, এবং হতেই থাকবে।
বাংলাদেশ খুব সম্ভবত পপুলেশন মোমেন্টাম থেকে এখন ইকোনোমিক মোমেন্টামে প্রবেশ করেছে। একটু একটু কিন্তু টের পাওয়া যাচ্ছে। এই মোমেন্টাম দিয়ে অন্তত আগামী ৮/১০ বছর বিশাল পরিবর্তন হয়ে যাবেই।
আর সবচেয়ে বড় গল্পটা কোথায়?
অর্থনীতির পুরোটা এখনো এলিট শ্রেণি পুরোটা গিলে খেতে পারেনি। পারছে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষুদ্র আর মাঝারি ব্যবসায়ীরা ভালো থাকবেন।
নতুন রিপোর্ট পড়েছেন নিশ্চয়? গ্রামীন অর্থনীতি শহরের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে খুব ধীর গতিতে! এর মানে কিন্তু অনেক!
যারা ক্ষুদ্র আর মাঝারি ব্যবসা করতে চান, অন্তত আরও ৭/৮ বছর ভালোভাবেই করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, তবে এটি কিন্তু ক্যারিয়ারের মতোই - যে ব্যবসাটা ভালো লাগে, আপনি বুঝেন, সেটিই করুন।
ছোটোবেলা শুনতাম, ঢাকার আকাশে টাকা উড়ে! আসলেই কিন্তু উড়ে, যাদের চোখ আছে তারা দেখতে পায় আর যারা ধরতে জানে, তারাই ধরতে পারে। নিঃস্ব থেকে এই ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ স্বচ্ছল হয়েছে।
পুরো বাংলাদেশে এখন ব্যবসা করার জন্য তৈরি, ব্যবসা আছে সর্বত্র। শুধু দেখার চোখটা থাকতে হবে আর সময়কে কাজে লাগিয়ে ব্যবসাটা জানতে হবে।
আর অন্যের গল্প শুনতে চাই না। নিজেরাই গল্প বানাতে চাই। হাজারো মানুষ এই চলমান সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে কয়েক লাখ সাফল্যের গল্প।
গল্পগুলো ছোটো না বড়? আমার কাছে এই গল্পগুলো বাংলাদেশের গল্প, তাই সবচেয়ে বড় গল্প।

Monday, April 17, 2017

বসে থাকলে, আপনার ক্যারিয়ারও বসে থাকবে। দৌড়ান, আপনার ক্যারিয়ারও দৌড়াবে।

(তবে কোথায় পৌঁছার জন্য দৌড় দিবেন সেটা কিন্তু ঠিকভাবে ঠিক করা চাই!)
পাশের বাড়ির ছেলেটা ফটোগ্রাফি করে মাসে দুই লাখ টাকা আয় করে, ওয়াও! ফটোগ্রাফি করে এতো টাকা! তাহলে তো আমাকেও ভর্তি হতে হয়। খালি শাটার টিপ দিয়েই এতো টাকা! তাহলে আমিও পারবো। দে দৌড়!
বেইলি রোডের পিঁয়াজু মামা খালি পিঁয়াজু বিক্রি কইরা ঢাকায় ৪টা বাড়ি করছে! দারুণ তো, তাহলে কি ফটোগ্রাফি শিখবো নাকি পিঁয়াজু বেচবো! পিঁয়াজু বানানো তো আরো সোজা! ঢাকায় ৪টা বাড়ি করা ঠেকায় কে!দে দৌড়!
লিটন দাস, জাবি দেখে পাশ করে মাসে ১০ লাখ টাকায় কামায়। কীসব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে! এইটাতে তো দেখি টাকা আরও বেশি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট , এইটা কোন কাজ! মাসে ১০ লাখ, ঠেকায় কে, তাহলে ফটোগ্রাফি আর পিঁয়াজু না বেইচা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করি! দে দৌড়!
পাশের বাসার মামুন ভাই, বুয়েট থেকে পাশ করে ঢাকায় ১৩টা ফ্লাট কিনছে, ইস ছেলেটা যদি বুয়েটে চান্স পাইতো, তাইলে আর চিন্তা কী! ছেলে্রে কড়া নির্দেশ , “তোরে বুয়েটে পড়তেই হইবো”! ছেলেও দিলো দৌড়! বুয়েটে পড়তেই হইবো। নাভিদ ভাই বলছে, বুয়েটে পড়লে দেশের সেরা সুন্দরীরা তোমার দরজায় আইসা সিরিয়াল দিয়া নক করবো আর আমেরিকার ভিসা ফ্রি! দে দৌড় – একদিকে বড়লোকের সুন্দরি মাইয়া, আরেকদিকে দেশে থাকলে, একটু সিনিয়য় হইলে বছরে ২৫/৩০ কোটি টাকা ব্যাপার না। তাইলে ফটোগ্রাফির দরকার নাই, পিঁয়াজু বিক্রির দরকার নাই, ইভেন্ট ম্যনেজমেন্টেরও দরকার নাই। বুয়েটেই পড়তে হইবো। দে দৌড়!
ভাই শুনছেন, ডা. শায়লা ২৩ লাখ টাকা বেতনে আপেল হাসপাতালে জয়েন করেছে! এরকম হাসপাতাল দেশে আরও হইতেছে। মাইয়ারে ডাক্তার বানাইতেই হইবো! মাসে ২৩ লাখ খালি বেতন! এরপরে তো ফ্ল্যাট, গাড়ি তো ঔষধ কোম্পানি কিন্নাই রাখছে! বছরে বছরে আবার ব্র্যান্ড চেইঞ্জও কইরা দেয়! আরে বাপরে বাপ! মাইয়ারে কড়া নির্দেশ, “সখিনা, তোরে ডাক্তার হইতেই হইবো, এইটা তোর দাদার বাপের স্বপ্ন ছিলো!”, অথচ সখিনার স্বপ্ন হয়তো ছিলো অন্য কিছু। একবার ডাক্তার হইতে পারলে আর ঠেকায় কে! দে দৌড়!
ওদিকে খবর পাওয়া গেলো, রাজউকের দারোয়ান কোটি কোটী টাকা, কাস্টমস/রাজস্ব বিভাগের পিয়ন সিলেটে কোটি কোটি টাকার রাজপ্রাসাদ বানাইছে!ওমুক থানার ওসি, ১৩টা গার্মেন্টস দিছে, জমি কিনছে শত শত বিঘা!ওদিকে খবর হলো! পানি সাপ্লাইয়ের পাইপ কেনার ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ঘাপলা দিয়া ৩ হাজার কোটি টাকা হাওয়া করে দিছে প্রধান প্রকৌশলী!
তাইলে কী হওয়া উচিত? ঠিক আছে, এক প্রোজেক্টে যদি ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া যায়, তাইলে আর চিন্তা কী! যাই এবার পানি সাপ্লাই দেয়ার প্রধান প্রকৌশলী হইতেই হবে। ডিসিসান ফাইনাল!
দে দৌড়!
কথায় কথায় ভুলে গেলাম, আসলে আমি কী হইতে চাইছিলাম! কোথায় যাওয়া দরকার ছিলো! গেলাম কোথায়! ব্যাংকে টাকার অভাব নেই, কিন্তু তারপরেও আমি অভাবগ্রস্ত!
সেই অভাব মনের শান্তির অভাব, যার অভাবে আসলে জীবনের ষোল আনাই মিছে। মিটার রিডার কোটি টাকার মালিক, শিক্ষাভবনের দারোয়ারের ইনকামও বেসুমার! সরকারি চাকুরি মানেই এক একটা ব্যাংক! টাকার কোন অভাব নেই।
কিন্তু আমারও একটা স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্নের খবর কী? স্বপ্নকে কবর দিলে, সে আবার জেগে উঠবে! সেই স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোটাই দরকার ছিলো, খুব দরকার ছিলো! দৌড় দেয়ার আগেই ঠিক করতে হবে, ঠিক কোথায় দৌড় দিতে হবে। জায়গাটা ঠিক করতে পারলে, ভালোভাবেই টাকা আসবে আর শান্তিও থাকবে।
দৌড়টা দিতে হবে, তবে ভেড়ার পালের মতো উদ্দেশ্যহীন নয়, মানুষের মতো।

Monday, July 25, 2016

‘২০১৬-২০২৫’ – বিস্ময়কর উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ।

৫ কোটি যুবক তৈরি। আছে সামর্থ্যের তুলনায় অনেক বিদ্যুৎ। রফতানিতে বিস্ময়। বিদেশী বিনিয়োগে রেকর্ড। গড়ে উঠছে দেশীয় মেগা কর্পোরেট। চার লেইন ঢাকা- চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড। আসছে পদ্মাসেতু। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। খাদ্যশষ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পোশাক রফতানিতে হতে যাচ্ছি বিশ্বের শীর্ষ দেশ।
নানা ঘাত প্রতিঘাতে ৪৫ বছর পেরিয়ে আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে চলে এসেছি যা সবার বিশেষ করে তরুণদের জানা খুবই দরকার। আসুন দেখি সামনে আমাদের কী কী সম্পদ আছে যা বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিস্ময়কররকম গতি দিবে!
খুব সংক্ষেপে যদি বলি,
১। যেভাবেই হোক, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিস্ময়ের পরিচয় দিয়েছে। এখন আর কেউ বিদ্যুৎ অফিস ভাংতে যায় না। পুরো দেশের অর্থনীতি যে দারুণরকম গতিশীল হয়েছে তার মূলে কিন্তু এই বিদ্যুৎ। মাত্র ৩৮০০ মেগাওয়াট থেকে মাত্র কয়েক বছরেই এখন ১২,৩৬৫ মেগাওয়াট! ভাবা যায়? যেভাবেই পারুক বিদ্যুৎ সে সামর্থ্যের চেয়ে বেশি দ্রুততম সময়ে সমাধান করেছে। তাই এখন মেগা কর্পোরেটদের সাথে গড়ে উঠছে লাখ লাখ নতুন উদ্যেয়াক্তা। ২০৩০ এ উৎপাদন দাড়াবে ৪০,০০০ মেগাওয়াট, চাহিদা থাকবে ৩৮,০০০ মেগাওয়াট!
বিস্ময়কর উন্নয়নের জন্য যে শক্তি দরকার, সেটা কিন্তু চলে আসতেছে, ক্রমশই বাড়ছে বাংলাদেশের সক্ষমতা।
বিদ্যুৎ তো বাড়ছে তা থেকে কী হবে?
২। আমরা কি খেয়াল করেছি ঠিক ভারতের মতো আমাদেরও কর্পোরেট জায়ান্ট গড়ে উঠেছে? মেঘনা গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপ, কনকর্ড, এপেক্স গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, নাভানা, রহিম আফরুজ, সামিট গ্রুপ, কাজি গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, মোহাম্মদি গ্রুপ, হামিম গ্রপ, এনার্জিপ্যাক, বিএসআরএম, মদিনা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, একে খান, স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ, আব্দুল মোনেম, আরো অনেক! – কী বিশাল জায়ান্ট হয়ে উঠছে এরা?
জাপান, আমেরিকার যতো কর্পোরেট সব সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। একদিন আমরাও বড় বড় ব্রিজ বানাবো, বড় বড় প্লান্ট আমরাই করবো, আমাদের রাস্তা আমরাই বানাবো।
এগুলো নানাভাবেই গড়ে উঠছে কিন্ত্য এরাই এখন নীতিমালায় আসছে এবং দেশটাকে বিপুলভাবে বদলে দিচ্ছে। এই কর্পোরেটগুলোর শুরু যাই হোক না কেন, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে বিস্ময়কর উত্থানে এরা বড় ভূমিকা রাখবে।
এবং এই কর্পোরেটরা বসে নেই।বিদ্যুৎ উতপাদন বাড়ার সাথে সাথে বিশাল বিশাল মেগা প্লান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এরা, যা একদিকে কর্মসংস্থান বাড়াবে, রফতানি আয়ও বাড়াবে অনেক।
এইসব কর্পোরেটরা কী করছে?
৩। ২০১৫-১৬ সালে রফতানির ইতিহাসে একটা দারুণ ঘটনা ঘটেছে! লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি রফতানি হয়েছে। এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কিন্তু ম্যাজিক দেখাচ্ছি। বিদ্যুত কিন্তু দারুণ ভূমিকা রেখেছে এই টার্গেট ছাড়িয়ে যেতে! এটা কি থামবে? না্‌ থামবে না!
বড় বড় কর্পোরেটরা এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে, তাদের সাথে গড়ে উঠছে লিংকেজ অনেক ইন্ডাস্ট্রি, যা বড় কর্পোরেটের সহযোগি হিসাবে গড়ে উঠেছে। আগামীতে এই ছোট ও মাঝারি সহযোগি ইন্ডাষ্ট্রির বিপুল সম্ভাবনা আছে এবং নতুনদের জন্য এ এক বিশাল সম্ভাবনা।
৪। গার্মেন্টসের সাফল্যের কথা সবাই জানে। ২০২১ পর্যন্ত টার্গেট ৫০ বিলিয়ন ডলার, তার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সবচেয়ে বড় আশার কথা , দুনিয়ার সব প্রাসঙ্গিক সংস্থা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছে – বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রফতানির দেশ হবে। হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিশ্বের এই আস্থা এমনিতে এসেছে? আমরা যখন শীর্্ষা পোশাক রফতানি আয়ের দেশে পরিণত হবো, তা কিন্তু হাতে থাকবে দশকের পর দশক!
এতো শিল্প, এই এতো আয় দিয়ে কী হবে?
৫। সরকার সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন বাবদ খরচ ২৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেলো, কিসের ভরসায়? এই যে ঈদে লক্ষ কোটি টাকার কেনাকাটা হয়, টাকা কোথা থেকে আসে? প্রতিটা উৎসবেই কক্সবাজারসহ পর্যটন এলাকায় লাখ লাখ ছুটে যায়, বিদেশেও যায়! ২৩ লাখ লোক সরকারি চাকুরিতে আছে, বাকি কয়েক কোটি লোক কিন্তু বেসরকারি চাকুরিই করে। বিদেশে আছে এক কোটি প্রবাসি।বেসরকারি খাতের চাকুরি পরিধী বাড়ছে ক্রমশই।
কয়েকলাখ বিদেশী আমাদের দেশ থেকেই ৫-৮ বিলিয়ন ডলার বা তার চেয়েও বেশি আয় করে নিয়ে যাচ্ছে! ভাবুন তো আমাদের সামর্থ্য কোথায় দাড়িয়েছে। আমরা লাখ লাখ বিদেশীকে চাকুরি দিচ্ছি! আমরা এক কোটি প্রবাসী থেকে যে রেমিটেন্স পাচ্ছি, ওরা মাত্র কয়েক লাখ তার অর্ধেকসমান নিয়ে যাচ্ছে!
তার মানে কী? দেশে দক্ষ লোকের চাকুরির অভাব হবে না। আমাদের ১ কোটি প্রবাসী শ্রমিক যার প্রায় পুরোটাই অদক্ষ, তারা যদি দক্ষ হতো, আমাদের রেমিট্যান্স ৪/৫ গুণ বেশি হতো আর দেশেও তাদের একটা বড় অংশের কর্মসংস্থান হতো।
কীভাবে তা সম্ভব?
৬। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ এখন আমাদের হাতের কাছে চলে এসেছে। জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স (৪৮%) ২৪ এর নীচে। ২৪-১০ এর মধ্যে আছে প্রায় ৩৫%। প্রতি তিনজনের একজন এখন যুবক। অথচ ইউরোপ আর জাপানের জনসংখ্যা কমেছে বিপদসীমা অতিক্রম করে!এই তো সময় বাংলাদেশের!
৭। শুধু কি আমরা? বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেটরা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবছে, বিনিয়োগের জন্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।২০১৫-১৬ সালে শুধু কি রফতানিতেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে? আরো একটা ঘটনা ঘটে গেছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগও এসেছে।
এতো কিছুর যৌথ ফলাফল কী হবে?
৫ কোটি যুবক রেডি! দেশটাকে বদলানোর জন্য!মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের হার বাড়ছে। মাছ উৎপাদনে এখন আমরা বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছি। শুধু ইলিশের উৎপাদন মাত্র কয়েক বছরে ৫০,০০০ টন থেকে ৩,৫০,০০০ টনে উন্নতি লাভ করেছে!জমি কমা সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদন অনেক বেড়েছে। দেশ এখন খাদ্যশষ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কতো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আমরা বাঁচাতে পেরেছি!
তেলের দামের ভয়াবহ ধ্বস আর রিয়েলের দাম কমা সত্ত্বেও রেমিটেন্সে কোন ধ্বস নামে নি। সামান্য কমেছে তবে যা কমার কথা ছিলো , তার তুলনায় অবস্থা অনেক ভালো।
এদিকে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা শুরু করেছে। ডিজিটাইলেশনের অনেক উপকার আসা শুরু হয়েছে। অনেক কিছুর সময় বেঁচে যাচ্ছে। দেশের কোন প্রান্তে টাকা পাঠানো আজ মুহূর্তের বিষয়! শুনে আশ্চর্য হই যখন শুনি কক্সবাজারের টেইলার্স মালিক কাপড় সেলাই করে নেয় বগুড়া থেকে! দেশের ভেতরের আউটসোর্সিং! লাখ লাখ নতুন উদ্যেয়াক্তা!
আইটি আজ হোক আর কাল হোক, এদেশে দাড়াবেই এবং তা গার্মেন্টস এর আয়কে ছাড়িয়ে যাবেই। এর সুবিধা হলো আইটি শিল্পের জন্য গার্মেন্টসের মতো বিশাল বিশাল অট্টালিকার প্রয়োজন হবে না। ১২০০ স্কয়ার ফুটের রুম থেকেই ১২০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
আর কিছু? হ্যাঁ, ঢাকা-চট্টগ্রামের চার লেন কিন্তু চালু হয়ে গেছে। সময় বাঁচবে কোটি কোটি ঘন্টা এবং আরো অনেক সম্ভবনা বাড়িয়ে তুলছে। ভাবুন তো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইন যদি চার লেনের হয়ে যায়? নিশচয় হবে। আর পদ্মা সেতু?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা সেতু আমাদের জিডিপিকে ১-১.৫ শতাংশ যোগ করবে! আচ্ছা এটা যদি ২০ বছর আগে হতো, হয়তো এখনি আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিট ছাড়িয়ে যেতে পারতাম!
তো এতো এতো বিশাল প্রস্তুতির এবং সম্ভাবনার ফলাফল কী?
ফলাফল – এক বিস্ময়কর বাংলাদেশ, যে দেশের উন্নয়ন সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিবেই।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এক বিস্ময়কর উন্নয়নের পথে।

আমরা আসলে কী চাই?

আমরা আসলে কী চাই? এক মেডিকেল কোচিং সেন্টারের মালিক ডাঃকে ধরা হয়েছে। গত ১৮ বছরে ৪০০০ ছাত্রকে সে পাবলিক মেডিকেলে অবৈধভাবে চান্স পেতে অর্...