Monday, October 14, 2019

আমরা আসলে কী চাই?

আমরা আসলে কী চাই?

এক মেডিকেল কোচিং সেন্টারের মালিক ডাঃকে ধরা হয়েছে। গত ১৮ বছরে ৪০০০ ছাত্রকে সে পাবলিক মেডিকেলে অবৈধভাবে চান্স পেতে অর্থের বিনিময়ে কাজ করেছে।
ঘটনাটা কী ভয়াবহ! মেডিকেলে চান্স পাওয়া এই গুরুর বিষয়টা কোথাও কোন আলাপ নেই। দেশ নিয়ে বড় বড় কথা বলা সবাই চুপ। লম্বা লম্বা বোলচাল দেয়া, সোশ্যাল মিডিয়া গরম করা লোকজন যাদের মধ্যে আমাদের অনেক প্রিয় ডাক্তাররাও আছেন, সবাই যেন মুখে কী দিয়ে অন্য আলাপে ব্যস্ত!
এক একজনকে চান্স পাওয়াতে গড়ে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে। ৪০০০x৪০ লাখ টাকা = কত টাকা?
এই যে ৪০০০ ভেজাল ঢুকে গেলো, যাদের পেছনে রাষ্ট্রের আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এর দায় কে নিবে?
এই যে ৪০০০ ভালো বা যোগ্য ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করেছে, তার দায় কে নিবো? যে ভালো ৪০০০ ছেলেমেয়ের ডাক্তার হওয়ার কথা ছিলো, তারা না হয়ে টাকা দিয়ে রেজাল্ট পালটে দিলো সেইসব অশুভ অমানুষগুলো।
এরাই তো ঔষধ কোম্পানির দালাল হবে। ঔষধ কোম্পানি ৪০০০ ফ্রি দালাল পেয়ে যাবে। যারা ঔষধ কোম্পানির হাতে হাজার কোটি টাকা তুলে দিবে আর মানুষকে নিঃস্ব করে লাখ কোটি টাকা চুষে নিবে ক্লিনিক মালিক, দালাল সবাই মিলে।
কী ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে এই ডাক্তার, এবং ডাক্তারদের একটি বড় জোট এই অপকর্মে জড়িত।
অথচ কোথাও শব্দ নেই। র‍্যাব, গোয়েন্দাবিভাগ তদন্ত করছে। কিন্তু এত বছর চললো কীভাবে এই ভয়ংকর অপকর্ম? আমরা কেউ কথা বলছি না কেন?
এই যে আমাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড - এর শেষ কোথায়? এই যে আমাদের ভণ্ডামি এর শেষ কোথায়?
আমাদের ভণ্ডামির জন্যেই বড় বড় দানবরা তৈরি হচ্ছে। আমরা কেউ পিছিয়ে নেই।
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ - সবাই লুটপাট করে খাচ্ছে এক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত প্রিয় বাংলাদেশকে।

Saturday, August 3, 2019

নাগরিক সংকট

নাগরিক সংকট!
সিএনজিতে যাচ্ছি। গুলশান-১ চেকপোস্টে থামালো। পুলিশ আমার ব্যাগ ৩ বার চেক করলো। আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি। মেডিটেশন করা মানুষ। সহজে রাগি না।
সিনিয়ির যে ছিলেন, তাকে ডাকলাম। বললাম, ভাই, উনি কি সুস্থ আছেন? এক ব্যাগ ৩ বার চেক করছেন! যাই হোক, উনি পরিচয় জানতে চাইলেন। পরিচয় দেয়ার পরে কয়েকবার সরি বললেন।
বললেন, "আপনি কোন ব্যাচ? আমার ছোটোভাই ৯x ব্যাচ।" বুঝলাম আমার ৫ ব্যাচ ছোটো।
"আমার ভাই রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে আছে। ৩ কোটি টাকা দিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বাড়ি করতেছে!"
আমি বললাম, আপনার ভাইয়ের বেতন কত?
গর্বে ভরা চেহারাটা মুহূর্তে ছাই হয়ে গেলো।
আমরা নাগরিকরা 'সবাই খারাপ, আমি ভালো' এক সিন্ড্রোমে আছি।
দোস্তো বলিস না, এই শালা ট্রাফিক পুলিশ, শালারা দুই টাকারও ঘুষ খায়!
দোস্তো, তোদের ফ্লাটে কত খরচ পড়েছে? এই সব মিলে ৯৭ লাখ।
তোর বাবা তো ট্যাক্সে আছে, বেতন কত? চেহারা আবারও ছাই।
ওদিকে লায়লা তার বয়ফ্রেন্ডকে বলছে, কাবিন কিন্তু ৩০ লাখ টাকা হতে হবে। (বয়ফ্রেন্ড ২৮ হাজার টাকার বেতনের চাকুরি করে!+) না হলে আমার প্রেস্টিজ পাংকচার! ফেবুতে পোস্ট দিয়েছে, "যে ছেলে যৌতুক চায়, তাদের না বলুন!"
এদিকে মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে কলেজের টিচার, আরেকজন পিডাব্লিউতে চাকুরি করে। মেয়ের বাবা পরেরজনে মত দেয়ায় মেয়ে বলছে, " বাবা তোমার পছন্দ সেরা"!
এক আত্মীয়ের বাসায় গেলাম। সারা জীবন সততার বুলি আউড়িয়েছেন। মেয়ের জামাই চাকুরি করেন সিটি কর্পোরেশনে। খুব গর্ব করে বলছেন, তার মেয়ে ঘরের ফার্নিচার ৪/৫ বছর পরেই পালটায়। মেয়ে খুব সৌখিন। ৮০ লাখ টাকায় ফ্লাট কিনে আরও ৫০ লাখ টাকা খরচ করছে ইন্টেরিয়র কাজে!
জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান, জামাইয়ের বেতন কতো?
মুখটা আবার সেই পুলিশ অফিসারের মতো ছাই হয়ে গেলো।
আমরা এত নষ্ট হয়েছি, এত নষ্ট হয়েছি যে, আমাদের কোন লজ্জা নেই। ঘুষ আমার অধিকার, কিন্তু কন্ডাকটর ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা চাইলে, "এগুলা মানুষ না। এই টাকা খাইয়া এরা কিছুই করতে পারে না। মানুষের টাকা মাইরা কিছুই করতে পারে না।" অথচ একটু আগেই মোবাইলে আলাপ করছিলো, একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরির জন্য ৯ লাখ আর ১০ লাখের ঘুষের আলাপ!!
কন্ডাকটর গলা কাটছে। গলা কাটছে শিক্ষিত দুর্বৃত্তরাও। শিক্ষিতদের গলাকাটা বড় নির্মম, দেশটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়।
কন্ডাকটররা একটা নিদারুণ সত্যি কথা বলে,
"আফনেরা যে কলমের খোঁচায় কুটি কুটি টাকা মাইরা খান, হেই হিসাব তো আমরা নেই না!"
কথা সত্যি এবং নিদারুণ সত্যি।
আজকে কিছু অসভ্য শ্রমিকদের দেখলাম অ্যাম্বুলেন্সেও কালি দিচ্ছে, আটকাচ্ছে।
সেই অ্যাম্বুলেন্স দেখে মনে পড়ে গেলো এর চেয়ে ভয়াবহ অসভ্য গোষ্ঠীর কথা। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির দালালদের কথা, যারা অতি উচ্চ শিক্ষিত এবং যাদের পেছনে রাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষধ, আইসিইউতে রেখে গলা কাটার সেই সব অমানুষদের কথা।
মানুষ হয়তো আছে। সংখ্যাটা কম।
শেষ করি, দুটো উদাহরণ দিয়ে। দুটো চকচকে চেহারার কথা!
শরীয়তপুর নামে একটি জেলা আছে। যেখানকার লাখ দুই ছেলে ইটালি থাকে। সেই এলাকার কোন মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব যদি ইটালির ছেলের হয়, খুশিতে সবার চেহারা চকচক করে (ছেলে বুড়া, ধুরা, বিয়াতো, দুই পোলার বাপ হইলেও সমস্যা নাই)। তবে এই মানুষগুলো খুব সাধারণ।
আর একটা চকচকে চেহারা আপনারা দেখবেন! যারা অসাধারণ!! 
মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তা কোথায় হলো, ছেলে কী করে?
যদি ঘুষের ডিপার্টমেন্টের হয়, 
দেখবেন মেয়ের বাবা মা, ভাই বোন আর মেয়ের চেহারা খুশিতে কেমন চকচক করে!!
অথচ এই যে অরাজকতা, এই যে ভেজাল জিনিস, এই যে উচ্চমূল্য, এই যে গলাকাটা সেবা, এই যে পেনশনের টাকা তুলতে ফাইলের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাওয়া, এই যে পরীক্ষায় ভালো করলেও চাকুরি না হওয়া, এই সবের মূলে তো ওই যে যেখান থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলে জিহবা চকচক করে, চেহারায় (নোংরা) খুশির ঢেউ উঠে, সেই দুর্নীতিবাজ শুওরদের কারণে।
বিখ্যাত এক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, "শুওরের বাচ্চাদের অর্থনীতি"! এই শুওরের বাচ্চারা কারা?
এই লেখা পড়ে পরে যাদের চেহারায় চপেটাঘাত পড়বে, ছাই হয়ে যাবে, তারা।

২৮ অক্টোবর ২০১৮ তে লেখা  আমার এই লেখাটি লক্ষ লক্ষ মানুষ পোস্ট করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

Tuesday, July 16, 2019

আমরা আসলে কী চাই?

আমরা আসলে কী চাই? এক মেডিকেল কোচিং সেন্টারের মালিক ডাঃকে ধরা হয়েছে। গত ১৮ বছরে ৪০০০ ছাত্রকে সে পাবলিক মেডিকেলে অবৈধভাবে চান্স পেতে অর্...