Sunday, April 23, 2017

গল্পগুলো বাংলাদেশের -

ছোটোবেলা থেকে সাফল্যের বেশির ভাগ গল্পগুলোর মানুষগুলো ছিলো অন্যদেশের। দেশের মধ্যে শেরে বাংলা আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গল্প পড়েছি। তবে সেগুলো রাজনীতি, সাহিত্য বা অন্য অবৈষয়িক বিষয়ের।
কয়েকদিন আগে বুয়েটের এক ছোটো ভাই আমাকে বলেছিলো, "খাজা ভাই অন্যদের কথা আর কতদিন বলবেন, আপনার গল্প শুনতে চাই, এমন কিছু করেন, অন্যেরা আপনার গল্প শুনবে!"
গল্প বড় বা ছোটো কোনটি? আচ্ছা, যে সৎ মাস্টারের ছেলেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে ১ পয়সা ঘুষ না দিয়ে চাকুরি পেলো তারটা? অথবা আমার যে বন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বড় কর্মকর্তা, জীবনে সে নামাজ কখনো কাযা করেছে কিনা জানি না, যাকে দেখলে মনে হয়, ও তো দুনিয়াতেই বেহশত কিনে নিয়েছে, এমন অসাধারণ মানুষ, তার গল্পটা?
থাক, আবারো চাকুরি নিয়ে বলছি! তরুণ ব্যবসায়ীদের কথা বলছি না কেন! ওই যে কিছু ছেলে টেলিকমের চাকুরি যাওয়ার পরে মোবাইল সেটের ব্যবসা শুরু করলো! ১ কোটি মোবাইলও তারা বিক্রি করে ফেলেছে। তাদের গল্পটা কিন্তু দারুণ!
ওই যে ২/৩ জন ২৫/২৬ বছরের ছেলে দেশে একটি আইটি কোম্পানি দিয়ে বছরে ১০০ কোটি টাকা আনছে বিদেশ থেকে! গল্পটা কি ছোটো? ভালো চাকুরি করছে প্রকৌশলী ছোটো ভাই, আবার ভ্রমণের নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপকে। ছুটি দুইদিন। এই দুইদিনই কাজে লাগাচ্ছে! বলেছে, খাজা ভাই, "এটি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা, করে দেখাতে চাই"। জানি ও পারবেই। গল্পটা ছোটা না বড়?
আমাদের বাসার সামনে একটা মুড়ির দোকান আছে, গুলশান লেকের সাথে। ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার প্যাকেজ! প্রতিদিন মুড়ি খেতে লাইন দেয় মানুষ! মাসে কম করে হলেও ৫ লাখ টাকা আয় হয় (মিনিমাম)। ওই লেকের পাড়ে ৫০-৬০ট শুধু ফুচকার দোকান গড়ে উঠেছে। প্রতিটার আয় মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা। গল্পটা কি ছোটো?
অথবা গত দুই বছরে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে যেতে যে রাস্তা আছে, কতগুলো নতুন খাওয়ার দোকান হয়েছে? ১০০ এর বেশি! অন্তত ওই রাস্তায় খাবারের দোকানের পিছনে সব মিলে ৫০ কোটি টাকার বেশি ইনভেস্ট করেছে! সব দোকানেই ভিড়!
ঢাকায় বসে কনটেন্ট লিখে কত তরুণ ছেলেমেয়ে ৬ ডিজিটের উপর আয় করছে , খবর নেই! আছে অনেক। গল্পটা ছোটো না বড়!
দেশে বৈশাখেও এখন বিক্রিবাট্টা ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দেশের দুই ঈদ এখন অর্থনীতকে পালটে দিচ্ছে। দুই ঈদে এবার হয়তো দুই লাখ কোটি টাকার বিক্রিবাট্টা হবে। বিশাল বিশাল বাজেট তৈরি হচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে, সে নিয়েতো সব সময় বলি। কিন্তু অর্থনীতি সব কিছুর পরেও বিশাল হচ্ছে, এবং হতেই থাকবে।
বাংলাদেশ খুব সম্ভবত পপুলেশন মোমেন্টাম থেকে এখন ইকোনোমিক মোমেন্টামে প্রবেশ করেছে। একটু একটু কিন্তু টের পাওয়া যাচ্ছে। এই মোমেন্টাম দিয়ে অন্তত আগামী ৮/১০ বছর বিশাল পরিবর্তন হয়ে যাবেই।
আর সবচেয়ে বড় গল্পটা কোথায়?
অর্থনীতির পুরোটা এখনো এলিট শ্রেণি পুরোটা গিলে খেতে পারেনি। পারছে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষুদ্র আর মাঝারি ব্যবসায়ীরা ভালো থাকবেন।
নতুন রিপোর্ট পড়েছেন নিশ্চয়? গ্রামীন অর্থনীতি শহরের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে খুব ধীর গতিতে! এর মানে কিন্তু অনেক!
যারা ক্ষুদ্র আর মাঝারি ব্যবসা করতে চান, অন্তত আরও ৭/৮ বছর ভালোভাবেই করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, তবে এটি কিন্তু ক্যারিয়ারের মতোই - যে ব্যবসাটা ভালো লাগে, আপনি বুঝেন, সেটিই করুন।
ছোটোবেলা শুনতাম, ঢাকার আকাশে টাকা উড়ে! আসলেই কিন্তু উড়ে, যাদের চোখ আছে তারা দেখতে পায় আর যারা ধরতে জানে, তারাই ধরতে পারে। নিঃস্ব থেকে এই ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ স্বচ্ছল হয়েছে।
পুরো বাংলাদেশে এখন ব্যবসা করার জন্য তৈরি, ব্যবসা আছে সর্বত্র। শুধু দেখার চোখটা থাকতে হবে আর সময়কে কাজে লাগিয়ে ব্যবসাটা জানতে হবে।
আর অন্যের গল্প শুনতে চাই না। নিজেরাই গল্প বানাতে চাই। হাজারো মানুষ এই চলমান সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে কয়েক লাখ সাফল্যের গল্প।
গল্পগুলো ছোটো না বড়? আমার কাছে এই গল্পগুলো বাংলাদেশের গল্প, তাই সবচেয়ে বড় গল্প।

Monday, April 17, 2017

বসে থাকলে, আপনার ক্যারিয়ারও বসে থাকবে। দৌড়ান, আপনার ক্যারিয়ারও দৌড়াবে।

(তবে কোথায় পৌঁছার জন্য দৌড় দিবেন সেটা কিন্তু ঠিকভাবে ঠিক করা চাই!)
পাশের বাড়ির ছেলেটা ফটোগ্রাফি করে মাসে দুই লাখ টাকা আয় করে, ওয়াও! ফটোগ্রাফি করে এতো টাকা! তাহলে তো আমাকেও ভর্তি হতে হয়। খালি শাটার টিপ দিয়েই এতো টাকা! তাহলে আমিও পারবো। দে দৌড়!
বেইলি রোডের পিঁয়াজু মামা খালি পিঁয়াজু বিক্রি কইরা ঢাকায় ৪টা বাড়ি করছে! দারুণ তো, তাহলে কি ফটোগ্রাফি শিখবো নাকি পিঁয়াজু বেচবো! পিঁয়াজু বানানো তো আরো সোজা! ঢাকায় ৪টা বাড়ি করা ঠেকায় কে!দে দৌড়!
লিটন দাস, জাবি দেখে পাশ করে মাসে ১০ লাখ টাকায় কামায়। কীসব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে! এইটাতে তো দেখি টাকা আরও বেশি। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট , এইটা কোন কাজ! মাসে ১০ লাখ, ঠেকায় কে, তাহলে ফটোগ্রাফি আর পিঁয়াজু না বেইচা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করি! দে দৌড়!
পাশের বাসার মামুন ভাই, বুয়েট থেকে পাশ করে ঢাকায় ১৩টা ফ্লাট কিনছে, ইস ছেলেটা যদি বুয়েটে চান্স পাইতো, তাইলে আর চিন্তা কী! ছেলে্রে কড়া নির্দেশ , “তোরে বুয়েটে পড়তেই হইবো”! ছেলেও দিলো দৌড়! বুয়েটে পড়তেই হইবো। নাভিদ ভাই বলছে, বুয়েটে পড়লে দেশের সেরা সুন্দরীরা তোমার দরজায় আইসা সিরিয়াল দিয়া নক করবো আর আমেরিকার ভিসা ফ্রি! দে দৌড় – একদিকে বড়লোকের সুন্দরি মাইয়া, আরেকদিকে দেশে থাকলে, একটু সিনিয়য় হইলে বছরে ২৫/৩০ কোটি টাকা ব্যাপার না। তাইলে ফটোগ্রাফির দরকার নাই, পিঁয়াজু বিক্রির দরকার নাই, ইভেন্ট ম্যনেজমেন্টেরও দরকার নাই। বুয়েটেই পড়তে হইবো। দে দৌড়!
ভাই শুনছেন, ডা. শায়লা ২৩ লাখ টাকা বেতনে আপেল হাসপাতালে জয়েন করেছে! এরকম হাসপাতাল দেশে আরও হইতেছে। মাইয়ারে ডাক্তার বানাইতেই হইবো! মাসে ২৩ লাখ খালি বেতন! এরপরে তো ফ্ল্যাট, গাড়ি তো ঔষধ কোম্পানি কিন্নাই রাখছে! বছরে বছরে আবার ব্র্যান্ড চেইঞ্জও কইরা দেয়! আরে বাপরে বাপ! মাইয়ারে কড়া নির্দেশ, “সখিনা, তোরে ডাক্তার হইতেই হইবো, এইটা তোর দাদার বাপের স্বপ্ন ছিলো!”, অথচ সখিনার স্বপ্ন হয়তো ছিলো অন্য কিছু। একবার ডাক্তার হইতে পারলে আর ঠেকায় কে! দে দৌড়!
ওদিকে খবর পাওয়া গেলো, রাজউকের দারোয়ান কোটি কোটী টাকা, কাস্টমস/রাজস্ব বিভাগের পিয়ন সিলেটে কোটি কোটি টাকার রাজপ্রাসাদ বানাইছে!ওমুক থানার ওসি, ১৩টা গার্মেন্টস দিছে, জমি কিনছে শত শত বিঘা!ওদিকে খবর হলো! পানি সাপ্লাইয়ের পাইপ কেনার ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ঘাপলা দিয়া ৩ হাজার কোটি টাকা হাওয়া করে দিছে প্রধান প্রকৌশলী!
তাইলে কী হওয়া উচিত? ঠিক আছে, এক প্রোজেক্টে যদি ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া যায়, তাইলে আর চিন্তা কী! যাই এবার পানি সাপ্লাই দেয়ার প্রধান প্রকৌশলী হইতেই হবে। ডিসিসান ফাইনাল!
দে দৌড়!
কথায় কথায় ভুলে গেলাম, আসলে আমি কী হইতে চাইছিলাম! কোথায় যাওয়া দরকার ছিলো! গেলাম কোথায়! ব্যাংকে টাকার অভাব নেই, কিন্তু তারপরেও আমি অভাবগ্রস্ত!
সেই অভাব মনের শান্তির অভাব, যার অভাবে আসলে জীবনের ষোল আনাই মিছে। মিটার রিডার কোটি টাকার মালিক, শিক্ষাভবনের দারোয়ারের ইনকামও বেসুমার! সরকারি চাকুরি মানেই এক একটা ব্যাংক! টাকার কোন অভাব নেই।
কিন্তু আমারও একটা স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্নের খবর কী? স্বপ্নকে কবর দিলে, সে আবার জেগে উঠবে! সেই স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোটাই দরকার ছিলো, খুব দরকার ছিলো! দৌড় দেয়ার আগেই ঠিক করতে হবে, ঠিক কোথায় দৌড় দিতে হবে। জায়গাটা ঠিক করতে পারলে, ভালোভাবেই টাকা আসবে আর শান্তিও থাকবে।
দৌড়টা দিতে হবে, তবে ভেড়ার পালের মতো উদ্দেশ্যহীন নয়, মানুষের মতো।

আমরা আসলে কী চাই?

আমরা আসলে কী চাই? এক মেডিকেল কোচিং সেন্টারের মালিক ডাঃকে ধরা হয়েছে। গত ১৮ বছরে ৪০০০ ছাত্রকে সে পাবলিক মেডিকেলে অবৈধভাবে চান্স পেতে অর্...